প্রকাশিত: Sat, Dec 31, 2022 3:45 PM
আপডেট: Mon, Jun 9, 2025 12:43 AM

বছরের শেষদিকে এসে বিএনপিকে সরকারের ‘অসাধারণ উপহার’!

হাসান শান্তনু

বিএনপিকে শেষদিকে এসে ‘অসাধারণ উপহার’ দেয়ার মধ্য দিয়ে খ্রিস্ট্রীয় বছরটা শেষ করছে আওয়ামী লীগের সরকার। হতে পারে, আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের যে কয়েক নেতা বিএনপির শীর্ষনেতাদের সঙ্গে বেয়াই, শ্যালক, ভায়রার সম্পর্ক রাখেন, তারা বিএনপিকে সরকারের পক্ষে ‘ব্যতিক্রমী উপহার’ দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। বিএনপি যা অনেক টাকা, শ্রম, গলাবাজি করেও অর্জন করতে পারতো না, সেটা সরকার করে দিয়েছে, দৈনিক দিনকাল পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ করে দিয়ে। এর চেয়ে ‘বড় রাজনৈতিক  উপহার’ আর কী হতে পারে? নারীর বয়স আর পত্রিকার প্রচারসংখ্যা দুটিই নাকি লুকোছাপার বিষয়। নারীর বয়স জানা প্রায়ই সম্ভব হলেও দিনকালের মতো পত্রিকাগুলোর প্রকৃত প্রচারসংখ্যা জানা সম্ভব হয় না। সম্পাদকদের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন বিষয়ক এক লেখায় দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক সম্পাদক মতিউর রহমান বলেছিলেন, ‘দিনকালের   প্রচারসংখ্যা বড়জোর পাঁচশত’। 

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে আজকের কাগজ, ভোরের কাগজের মতো দৈনিক পত্রিকা দেশীয় পাঠকের চিন্তা, মেজাজে দারুণ পরিবর্তন আনে। বিএনপির মুখপত্র দিনকাল, আওয়ামী লীগের মুখপত্র দৈনিক বাংলার বাণী থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন তারা। এসব পত্রিকা দলীয় কর্মীরাও কেনেন না। এ কারণে বাংলার বাণীর প্রকাশনা বন্ধ করে দেয় আওয়ামী লীগ। বিএনপির নেতাকর্মীরা দিনকাল পড়লে পত্রিকাটির প্রচারসংখ্যা নিশ্চয়ই আজকের পর্যায়ের হতো না। দিনকালের সাাংবাদিকতার নমুনা নিয়ে আলোচনা হোক। ১৯৯৭ সালে পত্রিকাটি ‘মারাত্মক এক প্রতিবেদন’ ছাপায়। এতে দেশের অর্ধশত বুদ্ধিজীবীর কথিত তালিকা ছাপায়, যারা ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন থেকে প্রতি মাসে টাকা নেন। কথিত তালিকায় বরেণ্য সাংবাদিক প্রয়াত এবিএম মূসা, নির্মল সেন, শফিক রেহমানসহ অনেকের নাম ছিলো। তাতে উল্লেখ ছিলো, শফিক রেহমান ভারতীয় হাই কমিশন থেকে প্রতিমাসে পাঁচ হাজার টাকা নেন ‘দেশটির পক্ষে দালালির ফি’ হিসেবে। 

দিনকালের ওই ধরনের সাংবাদিকতা নিয়ে আলোচনা আছে আমার লেখা ‘৪৩ বছরে গণমাধ্যমের অর্জনÑবিসর্জন’ বইয়ে (প্লাটফর্ম প্রকাশনী)। দিনকাল নামে বিএনপির মুখপত্র আছে, এটা দলটির অনেক নেতাকর্মী জানেনও না। পত্রিকাটি প্রকাশ হতো কী হতো না, এটাও বিএনপির নেতাকর্মীদের জানা ছিলো না। গত চৌদ্দ বছরে সরকারের কোনো খাতে অনিয়ম নিয়ে দিনকাল এমন কোনো প্রতিবেদন করতে পারেনি, যা সরকারকে ‘বিব্রতকর’ অবস্থায় ফেলতে পারে। তবে প্রকাশনা বাতিলের পর এখন যুক্তি দাঁড়াবে, দৈনিক আমার দেশ, চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টেলিভিশন, ইসলামিক টিভির পর সরকার এবার দিনকালের প্রকাশনা বন্ধ করে দিয়েছে। 

আর্ন্তজাতিক বিভিন্ন সংস্থা সরকারের নিন্দাও জানাতে পারে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্নে। দিনকালের পাঠকপ্রিয়তা কেমন, প্রচারসংখ্যা কতো ছিলো- বিদেশিরা বিবৃতি-বক্তব্যের আগে এসব জানার চেষ্টা করবেন না। এ দেশে সরকারিÑবেসরকারি কতো প্রতিষ্ঠানে আইনের ব্যত্যয় ঘটছে অহরহ। তাদের কিছু হচ্ছে না। শুধু দিনকালের ভেতর ‘শতভাগ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার’ এতো দরকার কেন হলো, এটাও প্রশ্ন। ওই পত্রিকায় অনেক সাংবাদিক কর্মরত। নিত্যপণ্যের দামের আকাশফোঁড়ার বাজারে সাংবাদিকদের বেকার হওয়ার ঠেকানোর দায় তথ্য মন্ত্রণালয়ের। পত্রিকাটির প্রকাশনা চালু রাখার সুযোগ দেওয়া হোক। লেখক: সাংবাদিক। ফেসবুক থেকে